সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যের লীলাভূমি বান্দরবান...!
উঁচুনিচু পথ, পাহাড়ের শরীর জুড়ে ঘন সবুজের সমারোহ যেন একেঁবেঁকে চলে গেছে গভীর থেকে আরো গভীরে। বান্দরবানের গহীনের সৌন্দর্য যেমন দুর্গম তেমনি রহস্যময়তার মায়াজালে ঘেরা। এই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকে এ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় ভ্রমণ পিপাসুদের। তাইতো সুযোগ পেলেই তারা ছুটে যায় বান্দরবানের পানে দুর্নিবার আকর্ষণে।
আন্ধারমানিক, বান্দরবানের গহীনে লুকিয়ে থাকা তেমনি এক শান্ত, সুন্দর, শীতল গন্তব্যের নাম। সাঙ্গু নদীর উজানে যেখান থেকে সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্টের শুরু ঠিক সেখানটায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকা আন্ধারমানিক যেন চেনা পৃথিবীর বাইরের কোনো জগত। নামের মতই রহস্যময় আন্ধারমানিকের পরিবেশ। এই নৈসর্গিক সৌন্দর্যময় স্থানটি নিজের চোখে না দেখলে অনুভব করতে পারবেন না এর বিশালতা। প্রকৃতির এক অদ্ভুত সৃষ্টি এই আন্ধারমানিক । সূর্যের আলো কম পৌঁছার কারণে জায়গাটি সবসময় অন্ধকার দেখা যায়। সম্ভবত এই কারণেই এর নাম হয়েছে আন্ধারমানিক।
আন্ধারমানিক
বান্দরবানের থানচি উপজেলার বড় মদক এলাকায় আন্ধারমানিক এর অবস্থান। আন্ধারমানিকের মূল আকর্ষণ হল নারেসা ঝিরি ।ঝিরির দুইপাশ ৬০/৭০ ফুট পাথরের দেয়াল সমান্তরাল ভাবে অনেক দূর চলে গেছে। মনে হবে মানুষের তৈরি কংক্রিটের ঢালাই দেয়া দেয়াল।
আন্ধারমানিক যেতে হলে আপনাকে প্রথমে দলিয়ান পাড়া থেকে রেমাক্রি ও ছোট মদক হয়ে বড় মদক যেতে হবে। রেমাক্রি থেকে আট ঘণ্টার হাঁটা পথ। যার ছয় ঘণ্টা সামান্য উঁচু নিচু ও নদীর পাড় ধরে শেষ দুই ঘণ্টা ঝোপঝাড়-পূর্ণ পাহাড়ি পথ। দারুণ এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি পাবেন এই পথে। যেভাবেই হোক সন্ধ্যার আগেই আপনাকে বড় মদকে পৌঁছাতে হবে। খৈসাপ্রু ও চাখাই পাড়ার পর সিঙ্গাফা ও ঠাণ্ডা ঝিরি সাঙ্গু নদীতে মিলিত হয়েছে। এর কিছুদূর পর তুর্গ ঝিরি দেখতে পাবেন। এখান থেকে আবার পাহাড়ি পথ শুরু। এই পাহাড়ি পথের মূল সমস্যা শুকনো লতাপাতার স্তূপ। অনেক জায়গায় পা ফেলার পর মনে হতে পারে পায়ের নিচে মাটি নেই। ফলে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলবেন সাবধানে।
গভীর জঙ্গলে ঢাকা আন্ধারমানিকের ভেতর, যা আসলে সাঙ্গুরই একটি অংশ। নদীর গভীরতা এখানে অনেক বেশি। দুই পাশে পাহাড়ের খাড়া প্রাচীর। পাহাড়ের দেয়াল খাড়া নেমে গেছে পানির গভীর তল পর্যন্ত। এখানে পাহাড়ের উঁচু উঁচু গাছ ভেদ করে সূর্যের আলো পৌঁছায় কম। যা এ স্থানটিকে করে তোলে রহস্যময়। বিভিন্ন প্রজাতির পুরনো বৃক্ষের ডালপালার ছায়ায় ঢাকা এবং শুনশান নীরব চারপাশ। মাছরাঙা ফুড়ুৎ করে উড়ে এসে ঠোঁটে তুলে নিয়ে যাচ্ছে ছোট রূপালী মাছ। একাধিক ঝরনার ঝিরিঝিরি শব্দ যেনো অতি পরিচিত কোনো গানের সুর হয়ে বাজতে থাকে অনবরত। আন্ধারমানিকের নিথর সবুজ পানির বুকে বিলি কেটে নৌকা নিয়ে এগিয়ে চলার অনুভূতি সত্যিই বর্ণনাতীত। পাহাড়, ঝর্ণা, পাথর আর সবুজের বন্যরূপের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আন্ধারমানিকের রূপ আপনার স্মৃতির মণিকোঠায় থাকবে সারাজীবন।
কিভাবে যাবেন আন্ধারমানিক, বান্দরবান:
ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি পরিবহন সার্ভিসের বাস ছেড়ে যায়। যেমন হানিফ, ইউনিক, শ্যামলী, এস আলম, ডলফিন ইত্যাদি যেকোনো একটি বাসে চড়ে যেতে পারেন বান্দরবান।
বান্দরবান থেকে আপনাকে যেতে হবে থানচি ,বাস ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। থানচি থেকে আন্ধারমানিক যাওয়া আসা ট্রলার রিজার্ভ বাবদ ১০,০০০ টাকার মতো নেবে। তবে বড় মদক বিজিবি ক্যাম্পের অনুমতির উপরই আন্ধারমানিক যাওয়া নির্ভর করে। চারদিন সময় নিয়ে গেলে ভালো করে দেখে আসতে পারবেন। থানচি থেকে বোটে তিন্দু, রেমাক্রি ছেড়ে যেতে হবে আরো অনেক দূর। রেমাক্রির পরের জায়গাটির নাম বড় মদক। এখানে ‘মুরং ওয়া’ নামে একটি পাড়া আছে। বড় মদক থেকে নদীপথে পাড়াটির দূরত্ব আট কিলোমিটার। এরপরই পেয়ে যাবেন রহস্যময় আন্ধারমানিক।
কোথায় থাকবেন :
রেমাক্রিতে কিছু গেস্ট হাউজ আছে। এছাড়া ছোট মদক ও বড় মদকে আদিবাসীদের ঘরে থাকতে পারবেন।
ভ্রমণ টিপস:
বড় মদকে পৌঁছেই বিজিবি ক্যাম্পে রিপোর্ট করবেন। কারণ তাদের অনুমতি ছাড়া আন্ধারমানিক যাওয়া সম্ভব নয়।
কর্পোরেট,ফ্যামিলি অথবা গ্রুপ ট্যুরের জন্য জয়যাত্রা ট্রাভেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। যোগাযোগ নাম্বারঃ ০১৭৩৮৬০১৯০৯
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন